ইস্টলেক হাউজ

স্থাপত্য বিষয়ক মাসিক প্রকাশনা বন্ধন ইস্যু ৭০
লেখকঃ শফিক রাহমান

ইস্টলেক হাউস একটি একক পারিবারিক আবাসন। উন্মুক্ত প্ল্যান, দ্বিতল উচ্চতাবিশিষ্ট জায়গা এবং বড় জানালা এ আবাসনকে সাজিয়েছে মনোমুগ্ধকর নান্দনিক সাজে। পারিবারিক এ নিবাসটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন দিনের আলোর ওপর ভিত্তি করে এটি অতি নাটকীয় অন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। এটি দ্বিতল আবাসিক ভবন। আয়তন ২৮২ বর্গ মিটার। লাগোয়া উন্মুক্ত অংশের আয়তন ৩৭০ বর্গ মিটার।


বাংলাদেশের স্থপতিরা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের বা বুকেও রেখে চলেছেন অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর। নিয়মিতই করছেন স্থাপত্য চর্চা, অর্জন করছেন সাফল্য। এমনই একজন স্থপতি ইফতেখার আব্দুল্লাহ। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে তিনি তাঁর স্থাপত্য চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার একজন রেজিস্টার্ড আর্কিটেক্ট হিসেবে স্থাপত্য চর্চা করছেন। এখানকার সিডনি, মেলবোর্ন ও ক্যানবেরাতে তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু কাজও রয়েছে। ইফতেখার আব্দুল্লাহ একজন অ্যাওয়ার্ডজয়ী স্থাপতি যার কাজ বিভিন্ন প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে সম্প্রতি শেষ হওয়া সিডনির ‘ইস্টলেক হাউস’ অন্যতম। ইস্টলেক হাউস একটি একক পারিবারিক আবাসন। উন্মুক্ত প্ল্যান, দ্বিতল উচ্চতাবিশিষ্ট জায়গা এবং বড় জানালা এ আবাসনকে সাজিয়েছে মনোমুগ্ধকর নান্দনিক সাজে। পারিবারিক এ নিবাসটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন দিনের আলোর ওপর ভিত্তি করে এটি অতি নাটকীয় অন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। এটি দ্বিতল আবাসিক ভবন। আয়তন ২৮২ বর্গ মিটার। লাগোয়া উন্মুক্ত অংশের আয়তন ৩৭০ বর্গ মিটার।

লুইস ব্যারেগান তাঁর প্রিজকার আর্কিটেকচার পুরস্কার ( Pritzker Architecture Prize Award) গ্রহণের বক্তব্যে লিখেছিলেন, 'এটা উদ্বেগজনক যে ২১ শতকের স্থাপত্য সৌন্দর্য, অনুপ্রেরণা, জাদু, সম্মোহন থেকে সরে গেছে, সেই সঙ্গে নির্মলতা, অন্তরঙ্গতা এবং মনোমুগ্ধকর ধারণা থেকেও। প্রকৃতপক্ষে, মানুষের মনের রহস্য হেঁয়ালিপূর্ণ হয়, যা ঋতুর সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, হাওয়ায় ভাসে এবং প্রকৃতির আলোর সঙ্গে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। তাঁর সেই বক্তব্যের সঙ্গে মিল রেখেই এ স্থাপনাটিকে গড়ে তোলা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব স্থাপনাটির প্রতিটি কক্ষে পরিমিত আলো- বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে। বাড়ির বারান্দা এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেন গ্রীষ্মের রোদ সরাসরি ভেতরে প্রবেশ করতে দেয় না, আবার শীতকালে যখন সূর্য হেলে থাকে, তখন প্রতিটি ব্যালকনিই সূর্যের আলো ও উষ্ণতা সমভাবে পেয়ে থাকে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ুগত কারণে ভবনটিতে ক্রস ভেন্টিলেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। এই ডিজাইনের ফলে পুরো বাড়িতে গ্রীষ্মকালে বাতাস বয়ে যায়, যা আলাদা করে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন পড়ে না।

স্থাপনারটির অন্দরসাজেও পেয়েছে সমান গুরুত্ব। ভেতরে ও বাইরে চোখে পড়বে রংবেরঙের কাচ, যা এর দেয়ালজুড়ে আলো প্রবেশের মাধ্যম তো বটেই, রঙের এই ভিন্নতা সেখানে বসবাসকারী মানুষের মানসিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই ডিজাইনের উদ্দেশ্য ছিল মেঝের বা ফ্লোর এরিয়ার পূর্ণবিস্তার করা, যা পাঁচটি বেডরুম, তিনটি টয়লেট, তিনটি লিভিং, দুইটি রান্নাঘর, একটি বার, একটি দ্বিতল গ্যারেজ এবং সেই সঙ্গে ১২০ বর্গ মিটারের লনের সমন্বয় অধিকাংশ বিশেষ স্থাপত্য নকশার বৈশিষ্ট্য হলো এমন একটি সমসাময়িক বিন্যাস প্রদান করা, যা প্রাপ্য জায়গাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এবং আশপাশের পরিবেশের পরিবর্তন বা ক্ষতি করে না। ভবনটির বিশেষত্বের অন্যতম এর বড় বারান্দা, যেটি গাছগাছালিঘেরা যা ভবনের গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং রাস্তার দৃশ্যমান অংশের সঙ্গে এমনভাবে মিলিত, যা সফলভাবে চাক্ষুষ আগ্রহ তৈরি করে এবং সন্তোষজনকভাবে কমনীয় ও স্বতন্ত্র স্থাপত্যশৈলী অর্জন করেছে।

এ ছাড়া এক্সিস্টিং বিল্ডিংয়ের বাইরে যেসব গাছ রয়েছে, সেগুলোর কথা মাথায় রেখে এবং এগুলোর বিন্দুমাত্র ক্ষতি না করে পুরো নকশাটি করা হয়েছে কাঠামোগত বৈশিষ্ট্যের দিক থেকেও ভবনটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। কেননা পুরো ভবনের স্ট্রাকচারটিই 'টিম্বার স্টাড স্ট্রাকচারে গঠিত, যা বাড়ির মূল কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, কাঠগুলো 'গ্রোউন টিম্বার' নামক বিশেষায়িত একটি পদ্ধতিতে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা, যা প্রকৃতির সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। কেননা কাঠ তৈরিতে কোনো কলকারখানার প্রয়োজন হয় না, তাই শক্তির অপচয় হয় না। তাই বলা যায়, ভবনটি কাঠামোগত দিক থেকে টেকসই এবং আবহাওয়ার সঙ্গে সামজ্ঞস্য রেখে তার ভারসাম্য বজায় রাখে। নকশার ধারণা পরিবেশগত এবং সামাজিক স্থায়িত্বকে একটি বিস্তৃত অর্থে একীভূত করে। ভবনটি তৈরি করা হয়েছে এর ওপর পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস করে, যার ফলস্বরূপ এটি তাপ, ঠান্ডা ও আলোক শক্তির ন্যূনতম চাহিদা তৈরি করে। এর ডিজাইন প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করে এবং বড় বারান্দা গ্রীষ্মের তাপ প্রতিরোধ করে ও শীতকালজুড়ে উত্তরের সূর্যকে স্বাগত জানায়। বৃষ্টির পানির পুনর্ব্যবহার এই ভবনের পানির চাহিদার একটি অংশ পূরণ করে থাকে। সিডনির সিবিডিতে অবস্থিত এই ভবনটি সেখানকার আবাসিক প্রকল্পের জন্য। একটি অনন্য পরিচয় বহন করে, যার কাজ সমাপ্ত হয় ২০১৫ সালের আগস্টে।


প্রধান স্থপতি। ইফতেখার আব্দুল্লাহ
প্রতিষ্ঠান: আইডিয়াস-ইফতেখার+ডিজাইন অ্যাসোসিয়েটস ১৭ ওয়াররাগ্যম ক্রিস লিউমি হাইট, এনএসডব্লিও ২৫৬০, সিডনি
প্রকল্প দল: ইফতেখার আব্দুল্লাহ, আশরাফুল আমিন জয় শামিম-উর-রহমান

কথোপকথনেঃ স্থপতি শফিক রাহমান
আলোকচিত্রঃ ফায়জুএ রহমান
অনুলেখন ও অনুবাদ: তাহিয়া তাবাচ্ছুম তৃণা